চলতি বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ভেনেজুয়েলার মারিয়া কোরিনা মাচাদো। শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টায় শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়।
ভেনেজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তার নিরলস প্রচেষ্টার জন্য এই পুরস্কার দেওয়ার কথা জানিয়েছে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, এ বছর নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয় ৩৩৮ জনকে। যারমধ্যে ২৪৪ জন হলেন ব্যক্তি। আর বাকি ৯৪টি মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকে।
গত বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিল জাপানি সংগঠন নিহন হিদানকিও। তারা পারমাণবিক বোমা হামলার শিকার মানুষদের প্রতিনিধিত্ব এবং পারমাণবিক অস্ত্র মুক্ত বিশ্ব গড়তে কাজ করে।
পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি দপ্তর সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান নিয়ে তৈরি জাতীয় তথ্য বাতায়ন সরকারের একটি ব্যাপক জনবান্ধব উদ্যোগ। সরকারি দপ্তরের কোন শাখা কোন সেবা সরবরাহ করে, কোন সেবার জন্য কার কাছে যেতে হবে এসবকিছু মানুষ এখন ঘরে বসেই জানতে পারছে। চারিদিকে তথ্যের অবাধ প্রবাহ।
প্রত্যেকটি অফিসেই একটি করে সিটিজেন চার্টার টাঙানো থাকে, যাতে করে সাধারণ জনগণ সহজেই ধারণা পায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকাণ্ড এবং সেবা সম্পর্কে। এটা ওয়েবসাইটেও থাকে। নাগরিক সেবা কিভাবে আরো জনবান্ধব করা যায়, সে চেষ্টা করতে হবে। সরকারি দপ্তরের সকল সেবাকে জনগণের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে। প্রতিনিয়ত জাতীয় তথ্য বাতায়ন ওয়েবসাইট হালনাগাদ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘জাতীয় তথ্য বাতায়ন হালনাগাদকরণ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ মোখতার আহমেদ। বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) তাহমিনা আক্তার।
এছাড়াও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস, পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ আবু বকর সিদ্দিক, বিভাগের আওতাধীন চার জেলার এডিসি (শিক্ষা ও আইসিটি)সহ ময়মনসিংহের সকল বিভাগীয় কার্যালয়ের দপ্তরপ্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।
শুরুতে পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে জাতীয় তথ্য বাতায়নের সার্বিক বিষয় তুলে ধরা হয়। এসময় মুক্ত আলোচনায় প্রত্যেক অফিসে ‘ওয়েব এডমিন’ নিয়োগ বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়। এছাড়াও সাইবার সিকিউরিটি এবং শক্তিশালী পাসওয়ার্ড সেট করা, সেবা সহজীকরণ বক্স ওয়েবসাইটের হোম পেইজে প্রদশর্ন, তথ্য হালনাগাদকরণের বিভিন্ন টেকনিক্যাল দিক বিশ্লেষণপূর্বক ভিন্ন ভিন্ন প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করা হয়।
সভাপতি বলেন, সবার জন্য তথ্য, সবার জন্য সেবা। সেবা নিতে এসে কোনো নাগরিক যাতে প্রতারণার শিকার না হয়, সে বিষয়ে সুদৃষ্টি দিতে হবে। নিয়মিত ওয়েবসাইট হালনাগাদ করতে হবে।
প্রধান অতিথি বলেন, সরকারের কোন দপ্তর কি ধরনের কার্যাবলী সম্পাদন করছে, ওয়েবসাইট হালনাগাদকরণের মাধ্যমে জনগণকে তা জানাতে হবে। সিটিজেন চার্টার, সেবা বক্স নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। ওয়েবসাইট হালনাগাদকরণে প্রত্যেক অফিসে কমপক্ষে দুইজনকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করতে হবে।
জনগণ যাতে প্রযুক্তির কল্যাণে শতভাগ সঠিক সেবা ও দিকনির্দেশনা সংশ্লিষ্ট অফিসের ওয়েবসাইটে পেয়ে যায়, সেজন্য সবাইকে সর্বোচ্চ সচেষ্ট হতে হবে। এজন্য নিয়মিত জাতীয় তথ্য বাতায়ন হালনাগাদ জরুরি।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোঃ রেজাউল মাকছুদ জাহেদী ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের ব্রাহ্মপল্লীএলাকায় অবস্থিত স্থানীয় সরকার বিভাগেরর সরাসরি তত্ত্ববধানে বাস্তবায়নাধীন এবং সিটি কর্পোরেশনের কর্তৃক পরিচালিত নগর মাতৃসদন গত (সোমবার) ১৩ অক্টোবর পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি নগর মাতৃসদনে কর্মরত কমকর্তা-কর্মচারীদেরকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করেন এবং সেবা প্রার্থীদের সাথে কথা বলেন। নগর মাতৃসদন পরিদর্শন শেষে বিকাল ৩.০০ টায় সিটি কর্পোরেশনের শহীদ শাহবুদ্দিন মিলনায়তনে নগর প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ক অংশীজনের সাথে এক মতবিনিয়মন সভায় অংশগ্রহণ করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন ময়মনসিংহ বিভাগের কমিশনার ও সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোঃ মোখতার আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারী প্রকল্পের পরিচালক নাজমুল হুদা শামীম (যুগাসচিব), বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডাঃ প্রদীপ কুমার সাহা সহ প্রমুখ।
সভায় প্রধান অতিথি মোঃ রেজাউল মাকছুদ জাহেদী তাঁর বক্তব্যে নগরবাসীর প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করেন। এসময় তিনি বিভিন্ন অংশীজনের কথা শোনেন এবং তাদেরকে আশ্বস্থ করেন। সভায় সিটি কর্পোরেশন প্রশাসক প্রতি ৩ ওয়ার্ডের জন্য ১ টি করে নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণের অনুরোধ করেন এবং সচিব মহোদয় এ ব্যাপারে সর্বত্মক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব সুমনা আল মজীদের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন এলজিআডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী, উপ-পরিচালক, স্থানীয় সরকার বিভাগ, ময়মনসিংহ উপকারভোগীসহ অন্যান্য অংশীজন।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নগর প্রাথমিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকর্তা ডা: এইচ কে দেবনাথ, সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাগণ, সকল বিভাগীয় প্রধানগণ, নগর মাতৃসদন কেন্দ্রের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।
ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি নদীর দুই পাড়ে স্থায়ী ও টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করেছে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ভয়েস অব ঝিনাইগাতী’। ১৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকাল চারটার দিকে স্বাক্ষরনামাসহ এ-সংক্রান্ত একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমানের মাধ্যমে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর জমা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে সকাল নয়টা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত ঝিনাইগাতী সদর বাজারের প্রধান সড়কের পাশে গণস্বাক্ষর নেওয়া হয়। নদীর আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের শত শত বাসিন্দা ও বাজারের ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ তাদের স্বাক্ষরের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের এ দাবি তুলে ধরেন।
এসময় আয়োজক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও ইউপি সদস্য মো. জাহিদুল হক মনিরের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন শেরপুরের বিশিষ্ট সমাজসেবী, শেরপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালের সভাপতি রাজিয়া সামাদ ডালিয়া, জনউদ্যোগ আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ, সদস্য সচিব হাকিম বাবুল, শেরপুর সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল কাদির, ঝিনাইগাতী ক্ষুদ্র বণিক সমবায় সমিতির সভাপতি মোখলেসুর রহমান খান, আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কাশেম প্রমুখ।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর দেওয়া স্মারকলিপি উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও মহারশি নদীর তীব্র স্রোতের কারণে নদীর দুই পাড়ে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়, যা এলাকার ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভয়াবহ ক্ষতির সৃষ্টি করে। একইসাথে ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদসহ সদর বাজার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বিগত কয়েক বছরে মহারশি নদীর ভাঙনে উপজেলার ঝিনাইগাতী সদর, রামেরকুড়া, খৈলকুড়া, দিঘিরপাড়, বনগাঁও, চতল, মরিয়মনগর, কালীনগর, বন্দভাটপাড়া, আহমদ নগর, গজারিকুড়া, ভাটপাড়া, রামনগর, বৈরাগীপাড়া গ্রামের শত শত পরিবার সরাসরি ক্ষতির মুখে পড়েছে। বিগত তথ্য অনুযায়ী গত এক দশকে ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন ও ভেঙে গেছে, প্রায় সহস্রাধিক মাছের খামার ও ঘের ভেসে গেছে। প্রায় ৫০ টি মুরগীর খামার ভেসে গেছে, প্রায় ১০ হাজার একরের বেশি আবাদি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, একাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সড়ক ভেঙে গেছে, প্রতি বর্ষা মৌসুমে গড়ে ৫ হাজারের বেশি পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবনযাপন করেন, ঝিনাইগাতী বাজার ও আশপাশের অন্তত শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর নদীভাঙনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে মহারশি নদী এলাকার অনেক গ্রামের জন্য স্থায়ী হুমকিতে পরিণত হয়েছে। অস্থায়ী বালুর বস্তা বা কাঁচা বাঁধ দিয়ে কিছুদিনের জন্য পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গেলেও তা দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর নয়। প্রতিবছর একই দুর্ভোগে পড়া আমাদের পক্ষে আর সম্ভব নয়। নদীর তীর সংরক্ষণ ও জনজীবন রক্ষার্থে মহারশি নদীর উপর একটি স্থায়ী ও টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হলে ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি নদীভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নিরাপদ থাকবে, ঝিনাইগাতী বাজার ও আশপাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রক্ষা পাবে, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধিত হবে, জনগণের জীবনমান ও স্থানীয় অর্থনীতি টেকসই হবে।
আয়োজক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও ইউপি সদস্য মো. জাহিদুল হক মনির বলেন, বর্ষা মৌসুমে মহারশি নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে দুই পাড়ের কয়েকটি গ্রাম নিয়মিতভাবেই প্লাবিত হয়। এতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ফসল, ঘরবাড়ি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতি হয়। এসব দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেতে নদীর দুই পাড়ে টেকসই ও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি। এ নদীর টেকসই ও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ ঝিনাইগাতীবাসীর প্রাণের দাবি। এ দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা ধারাবাহিকভাবে আরও কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
এ বিষয়ে শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি ও স্বাক্ষরনামা প্রেরণ করে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ গত ১৮ সেপ্টেম্বর মহারশি নদীর ব্রীজ সংলগ্ন খৈলকুড়া এলাকায় নদীর বাঁধ ভেঙে অন্তত ১০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। একই সঙ্গে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পাড় উপচে ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর বাজারে পানি প্রবেশ করে। এতে এক মুহূর্তে ভেসে যায় অন্তত ৯টি পরিবারের বসতভিটা। ভেঙে পড়ে বিদ্যুতের খুঁটি, ভেসে যায় ৫০টিরও বেশি মাছের ঘের। পানিতে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয় ৩৪৫ হেক্টর জমির আমন ধান ও ১০ হেক্টর সবজি খেত এবং আংশিকভাকে নিমজ্জিত হয় ৫৭৫ হেক্টর জমির আমন ধান ও ২৫ হেক্টর সবজি খেত। এক দিনেই সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন অনেক পরিবার।