আলোচিত নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণা আজ, ট্রাম্প কি পাবেন?

২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের বিজয়ী ঘোষণা করা হবে আজ শুক্রবার। ২০২৫ এমন এক বছর, যেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানিত এই পুরস্কারটি অর্জন করতে চান।
ট্রাম্প তার পূর্বসূরিদের মধ্যে চারজনের মতো এই পুরস্কার জয়ের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তারা হলেন, বারাক ওবামা (২০০৯), জিমি কার্টার (২০০২), উড্রো উইলসন (১৯১৯) এবং থিওডোর রুজভেল্ট (১৯০৬)।
এর মধ্যে, কার্টার ছাড়া অন্যরা তাদের দায়িত্ব পালনের সময় এই পুরস্কারটি জিতেছিলেন। ওবামা মাত্র আট মাসের মধ্যে প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন, ওই একই সময়ে যে অবস্থানে ট্রাম্প বর্তমানে আছেন।
নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির নেতা জারগেন ওয়াটনে ফ্রাইডনেস শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় নরওয়েজিয়ান নোবেল ইনস্টিটিউটে মাইক্রোফোনে এসে পুরস্কৃত ব্যক্তির নাম ঘোষণা করবেন। বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টায় নরওয়ের অস্কার হল থেকে অনুষ্ঠান শুরু হবে।
এবার মোট ৩৩৮ জন প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন, যাদের মধ্যে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক, রাষ্ট্রপতি ও সংস্থা রয়েছে। নোবেল কমিটি বিজয়ী বাছাই করে আন্তর্জাতিক শান্তি ও মানবিক কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের নাম খুব সম্ভবত উচ্চারিত হবে না। তবে ট্রাম্প যদি নোবেল না পান তাহলে তিনি কী করবেন এ নিয়ে আতঙ্কে আছে নরওয়ে।
ট্রাম্প যেকোনো কিছু করতে পারেন এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে নরওয়ের স্যোশালিস্ট লেফট পার্টির বৈদেশিক নীতির মুখপাত্র বলেছেন, ‘যেকোনো কিছুর জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।’
ট্রাম্প গত বুধবার গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির চুক্তি ঘোষণা করেছিলেন। যা তার উদ্যোগের প্রথম পর্যায়ে যুদ্ধের অবসান ঘটানোর লক্ষ্য নিয়ে ছিল। তবে নরওয়েজিয়ান দৈনিক ভিজে-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, কমিটি সোমবার (চুক্তি ঘোষণার আগেই) তাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং যদিও এই পাঁচ সদস্য চুক্তিটি জানতেন, তবুও তাদের দীর্ঘ আলোচনা ছাড়া কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর সম্ভাবনা কম।
অনেক অভিজ্ঞ নোবেল পর্যবেক্ষক মনে করেন ট্রাম্পের পুরস্কার জেতার সম্ভাবনা খুব কম।
কারণ তারা মনে করেন, ট্রাম্পের উদ্যোগ বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আন্তর্জাতিক বিশ্বব্যবস্থা ধ্বংসের দিকে পরিচালিত করছে, যা নোবেল কমিটি সযত্নে রক্ষা করতে চায়। তারা মনে করেন, কমিটি সম্ভবত সুদানের এমারজেন্সি রেসপন্স রুম নামে স্বেচ্ছাসেবী নেটওয়ার্ক, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা অথবা সাহায্য সংস্থা যেমন রেড ক্রস বা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস-এর কাজকে মূল্যায়ন করতে পারে।
সাংবাদিকদেরও সম্মানিত করতে পারে, কারণ ২০২৩ সালে গাজার মতো ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সর্বোচ্চ সংখ্যক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। যদি তা হয়, তবে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস বা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সকে পুরস্কৃত করতে পারে।
নোবেল পুরস্কারের প্রবর্তন করেছিলেন সুইডিশ ধনী রসায়নবিদ ও শিল্পপতি আলফ্রেড নোবেল। তিনি তার উইলে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তার সম্পত্তির বেশির ভাগ অংশ ব্যয় করা হবে এমন সব ব্যক্তিকে পুরস্কৃত করতে, যারা ‘পূর্ববর্তী বছরে মানবজাতির জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ কল্যাণ সাধন করেছেন’।
আলফ্রেড নোবেল প্রধানত ডিনামাইটের আবিষ্কারক হিসেবে পরিচিত। তবে তিনি কবিতা ও নাটকও লিখতেন। ১৭ বছর বয়সে তিনি রুশ, ফরাসি, ইংরেজি ও জার্মান ভাষায় কথা বলতে পারতেন। পুরস্কারের পাঁচটি মূল বিভাগ তার সবচেয়ে প্রিয় আগ্রহের বিষয়গুলোকে প্রতিফলিত করে।
কমিটি প্রতিবছর ব্যাপক আলোচনা এবং যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে পুরস্কৃত ব্যক্তির নাম নির্ধারণ করে। পুরস্কারের জন্য প্রার্থীদের মনোনয়ন জানুয়ারি ৩১ তারিখের মধ্যে কমিটিতে পৌঁছাতে হয়। প্রথম বৈঠকে কমিটির সদস্যরা নিজেদের মনোনয়ন দিতে পারেন, তবে এটি ফেব্রুয়ারি মাসের আগে করতে হবে। তারপর কমিটি প্রতি মাসে অন্তত একবার বৈঠক করে। তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়সীমা আগস্ট বা সেপ্টেম্বর মাসে হতে পারে, তবে এটি আরো দেরিতে হতে পারে।
জারগেন ফ্রাইডনেস রয়টার্সকে বলেছেন, ‘সব রাজনৈতিক নেতাই নোবেল শান্তি পুরস্কার জিততে চান।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, নোবেল শান্তি পুরস্কারের আদর্শগুলো সব রাজনৈতিক নেতার জন্য অনুসরণীয় হওয়া উচিত… আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পৃথিবীজুড়ে নজরদারি দেখছি, তবে এর বাইরে আমরা আগের মতোই কাজ করছি।’
সূত্র : রয়টার্স