ময়মনসিংহে ১৭৯তম বিশ্ব এনেস্থেসিয়া দিবস উদযাপন উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

বিশ্বব্যাপী উদযাপিত ১৭৯তম বিশ্ব এনেস্থেসিয়া দিবস উপলক্ষে ময়মনসিংহে আয়োজন করা হয় এক বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভার। এতে অংশ নেন ময়মনসিংহের স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তাবৃন্দ, চিকিৎসক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পেশাজীবী।
দিনব্যাপী এ আয়োজনে এনেস্থেসিয়ার গুরুত্ব, ভূমিকা এবং ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ নিয়ে উঠে আসে বিভিন্ন দিক। অনুষ্ঠানের মূল প্রতিপাদ্য ছিল, “Anesthesia in Health Emergency” অর্থাৎ, স্বাস্থ্য জরুরি পরিস্থিতিতে এনেস্থেসিয়ার অপরিহার্যতা।
আজ বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮টায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে এক বর্ণাঢ্য র্যালি শুরু হয়। র্যালিটি কলেজ ও হাসপাতাল ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। র্যালিতে অংশগ্রহণ করেন শতাধিক চিকিৎসক, নার্স, ইন্টার্ন, প্যারামেডিকস ও শিক্ষার্থীরা।
আলোচনা সভা ও র্যালি শেষে কলেজ মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় আলোচনা সভার। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএমএ-সিসিপিপি ময়মনসিংহ শাখার আহ্বায়ক, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী।
প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম ফেরদৌস।
তিনি বলেন, ১৮৪৬ সালে এনেস্থেসিয়ার আবিষ্কার চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। এ পেশার মানুষরা সবসময় পর্দার আড়ালে থাকেন, কিন্তু তাদের অবদান অপরিসীম। অস্ত্রোপচার, ইনটেনসিভ কেয়ার ও জরুরি চিকিৎসা সেবায় এনেস্থেসিস্টদের দক্ষতা ছাড়া স্বাস্থ্যখাত অচল হয়ে পড়ত। বর্তমানে প্রয়োজন আরও দক্ষ জনবল, আরও প্রশিক্ষণ।
অনুষ্ঠানে “Anesthesia in Health Emergency” শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ।
তিনি বলেন, যেকোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা, অপারেশন কিংবা সংকটকালে রোগীর প্রাণ বাঁচাতে এনেস্থেসিয়ার প্রয়োজনীয়তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে। আধুনিক চিকিৎসার অগ্রগতির সাথে সাথে এনেস্থেসিয়ার পরিধিও দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে। তাই স্বাস্থ্যখাতে এনেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞ তৈরি ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
আলোচনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, প্রফেসর ডা. মামুনুর রশীদ, প্রিন্সিপাল, কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ (CBMC)। তিনি বলেন, বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় এনেস্থেসিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি পর্যাপ্ত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এই পেশায় তরুণদের আগ্রহী করতে হলে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের পরিবেশ আরও আধুনিক করতে হবে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, প্রফেসর ডা. মোঃ মতিউর রহমান, ভাইস প্রিন্সিপাল, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ। তিনি বলেন, এনেস্থেসিয়া ছাড়া আধুনিক চিকিৎসা কল্পনাও করা যায় না। অথচ সমাজে তাদের অবদান সেভাবে স্বীকৃতি পায় না। এই দিবসের মাধ্যমে সেই ঘাটতি কিছুটা হলেও পূরণ হবে বলে আশা করি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, প্রফেসর ডা. এম করিম খান, পরিচালক, CBMC। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাতে উন্নয়নের জন্য এনেস্থেসিয়ার উন্নয়ন একান্ত প্রয়োজন। এই খাতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
এ সময় উপস্থিত অন্যান্য সম্মানিত অতিথিরা ছিলেন, প্রফেসর ডা. তানভির আহমেদ, অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. খোরশেদ আলম, সহযোগী অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম, বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি, সহযোগী অধ্যাপক ডা. শফিকুর রহমান, ডা. দিলীপ কান্তি বিশ্বাস, সাবেক সভাপতি, বিএনএম-সিসিপিপি, ডা. জাকির হোসেন জিকু, ডা. আল্লামা ইকবাল।
অনুষ্ঠানে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন ও ধন্যবাদ দেন ডা. আব্দুল্লাহ আল কারিম এবং ব্রেক্সিমকোর ম্যানেজার আতাউল গনি। সার্বিকভাবে অনুষ্ঠানটি সুচারুভাবে সঞ্চালনা করেন ডা. মোহাম্মদ ইসহাক।
এনেস্থেসিয়া দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানটি অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে স্বাস্থ্যখাতে এনেস্থেসিয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে নতুন করে ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে। চিকিৎসাক্ষেত্রে এই ‘নীরব যোদ্ধা’দের অবদান যেন দেশজুড়ে স্বীকৃতি পায়, এমনটাই প্রত্যাশা করেন বক্তারা।